Sunday, October 28, 2012

বিশ্ব মানবআধিকারের স্বঘোষিত ধ্বজাধারী দুই আঁতেল নরওয়ে এবং সুইডেনের ভণ্ডামি




বিশ্ব মানবাধিকারের ধ্বজাধারী দুটো দেশ নরওয়ে এবং সুইডেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোতে পান থেকে চুন খসলেই ওই দেশের সরকার গেল গেল রব তুলে। আমাদের বাংলাদেশকেও তারা বিভিন্ন ভাবে চাপে রাখে। অন্যান্য অনেক দেশের হিপোক্রেসী এখন ওপেন সিক্রেট। তবে এই দুই “বিশ্ব মানবতার আঁতেল” ঘরানার দুটি দেশের হিপোক্রেসী সম্পর্কে অনেকে বোধয় অবগত নন। তাই কিছু শেয়ার করছি -

সামি – স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সত্যিকারের আদিবাসী





বর্তমান নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ড এবং রাশিয়ার মারমানস্ক অঞ্চলের আদিম বাসিন্দা হল “সামি” জনগোষ্ঠী। তারা খৃস্টপূর্ব ৫০০০ বছরেরও আগে হতে উক্ত অঞ্চলে বসবাস করছে। যুক্তিসঙ্গত কারণে এখানে রাশিয়া এবং ফিনল্যান্ডের আলোচনা করা হবেনা কেননা তা আলোচ্য নয়।

নরওয়েজীয়ান এবং সুইডিশরা বর্তমান ১০ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই অঞ্চলে পূর্ব ইউরোপ থেকে আগমন করে। প্রথমদিকে নতুন এই অভিভাষণকারী জনগোষ্ঠীর সাথে সামিদের তেমন সমস্যা হয়নি কারণ তাদের বেশিরভাগ দক্ষিণাচলে থাকত। ১৬ শ শতাব্দীর পর হতে সামি অঞ্চলে নরওয়েজীয়ান এবং সুইডিশ বহিরাগতদের প্রবেশ শুরু হতে থাকে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ হতে সামি জনগোষ্ঠীর উপর বৈষম্য প্রকট হতে থাকে ফলশ্রুতিতে ১৮৫২ সালে নরওয়েতে “কাটোকইনো” বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং নরওয়ে সরকার শক্ত-হাতে তা দমন করে। বিংশ শতাব্দীর ২০ এবং ৩০ এর দশকে নরওয়ে এবং সুইডেন সরকার কতগুলো আইন তৈরি করে সামি জনগোষ্ঠীকে একেবারে কোণঠাসা করে দেয়।
সামি জনগোষ্ঠীর উপর বিভিন্ন বৈষম্যের প্রধানতম দিকগুলোঃ

১। তাদের নিজেদের ভূমির অধিকার কেরে নেওয়া। বিভিন্ন কারণে ভূমি হতে উচ্ছেদ, স্থানান্তরকরণ ইত্যাদি।

২।বৈজ্ঞানিক উপায়ে জাতিসত্তা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত করে দেওয়া। নরওয়েতে সামিদের নিজ ভাষা শিক্ষার উপর নিষেধ আরোপ করা হয় এবং সমগ্র সামি জনগোষ্ঠীকে আস্তে আস্তে সাংস্কৃতিক ভাবে নরওয়েজীয়ান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সুইডেনের অবস্থা আরও খারাপ ছিল। তারা অনেক সামির উপর বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা চালাত এবং অনেক সামি মহিলাকে সন্তান ধারণে অক্ষম করে ফেলা হয়।

৩। জোড় করে খনিতে কাজ করতে বাধ্য করা সুইডেনে খনি আবিষ্কৃত হবার পর সামি জনগোষ্ঠীদের তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবিকা থেকে জোড় করে এনে খনিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

১৯৭০ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক এবং আভ্যন্তরীণ নানা চাপে নরওয়ের এবং সুইডেনের সরকার সামি জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অধিকার দিতে বাধ্য হয়েছে বেশিরভাগ বাস্তব রূপ দেখেছে ১৯৯০ সালের পর থেকে। নরওয়ের রাজা কৃত দোষ স্বীকার করে সামিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।


শিশুদের সাথে অমানবিকতা



হিটলারের জাতি মিশ্রণ এবং আর্য রক্তের বংশ তৈরিকরণ প্রকল্প সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। ইতিহাসের এক জঘন্যতম অধ্যায় যা “লিবেন্সবর্ন” প্রকল্প নামে কুখ্যাত। উন্নত আর্য বংশ জন্মদানের উদ্দেশ্য অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মহিলাদের আর্য ঔরসজাত (বিশেষত জার্মান) সন্তান ধারণে উৎসাহ কিংবা বাধ্য করা হত।

নাৎসি জার্মান অধিকৃত নরওয়েতেও তেমন একটি প্রকল্প ছিল। যাই হোক জার্মান পরাজয়ের পর নরওয়ের সরকার উক্ত শিশুদের সাথে যে আচরণ করল তা কালের ইতিহাসে যেকোনো ঘৃণ্য কাজকেও হার মানাবে যা মানবতা-বিরোধী বিভিন্ন নাৎসি প্রকল্প থেকেও কম না।

সবচাইতে বড় কথা ওই শিশুদের তো কোন দোষ ছিলনা কিন্তু নরওয়ের তৎকালীন সরকার তা বুঝতে পারেনি। সময় ১৯৪৫ পর সকল যুদ্ধ শিশুদের তাদের মায়ের কোল হতে কেড়ে নেওয়া হয়। বেশিরভাগ শিশুই ধর্ষণ এবং ভয়াবহ অত্যাচারের শিকার হয় এবং তাদের সমস্ত মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়। এই রকম যুদ্ধ শিশু ইউরোপের অন্যান্য দেশের নাৎসি অধিকৃত অঞ্চলেও ছিল কিন্তু ওখানে নরওয়ের মত করা হয়নি।
নরওয়ের সেই যুদ্ধ শিশুরা যারা এখন অনেকই বৃদ্ধ তারা তাদের অধিকার এবং ক্ষতিপূরণের জন্য এখনো আন্দোলন করছেন।


যারা আরো বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তারা গুগল এবং উইকিপিডিয়াতে নিম্নোক্ত শব্দ দিয়ে সার্চ করতে পারেনঃ

১।Sami people, history, discrimination, Norway, Sweden

২।Lebensborn, war children, discrimination, Norway, Nazi eugenics

----------------------------------------XXXXX------------------------------------------------

 প্রবন্ধটি ১৭ই মে, ২০১২ সালে সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment