Thursday, October 25, 2012

"ন্যায়বিচারের ধর্ষণ" না "ন্যায়বিচারের হত্যা" হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবারের অমতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অন্যায় ভাবে খুনিকে ক্ষমা প্রদান



কেউ অন্যায় কিংবা ভুলভাবে সাজাপ্রাপ্ত হলে আইনি পরিভাষায় ওই ঘটনাকে “মিসক্যারিজ অফ জাস্টিস”বলা হয় যার বাংলা ভাবার্থ দারায় “ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা” আক্ষরিক অর্থ “ন্যায়বিচারের গর্ভপাত”।

এখন কেউ যদি খুনের মত অপরাধ করার পরও তার ব্যক্তিগত প্রভাব দিয়ে সে নিজেকে তার কৃত অপরাধের শাস্তি থেকে আইনি ভাবে বাচাতে পারে, ফরিয়াদিদের ইচ্ছার থোরাই পরোয়া করে তাকে কি বলা যায় “রেপ অফ জাস্টিস”(ন্যায়বিচারের ধর্ষণ) নাকি “মার্ডার অফ জাস্টিস” ”(ন্যায়বিচারের হত্যা) ।

আমাদের দেশে এই নিয়ে দুইবার প্রথমশ্রেণীর হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হয়ে বিচারের রায় দেওয়ার পরও খুনিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়াছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায়। প্রথমটি ঘটিয়েছে বি এন পি, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামী জিন্টু কানাডা পলাতক ছিল এবং পরেরটি ঘটিয়েছে আওয়ামীলীগ, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামীর নাম বিপ্লব। জিন্টু এবং বিপ্লব দুজনই রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছে তাদের হাতে খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবারের অসম্মতিতে।

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান কর্তৃক কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমা প্রাপ্তদের মধ্য আরও আছে সাদাব আকবর (সাজেদা চৌধুরীর ছেলে) এবং, আওয়ামীলীগ নেতা আহসান হাবীব টিটু এবং শাওনা। তাছাড়া আরও ২০ জন কে তিনি ক্ষমা করেছেন শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায়।

অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচারতো ঠিকমত হতেই পারলনা!!!!এক সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (বি এন পি) নিজেই বিশ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে গিয়েছিল বসুন্ধরা কোম্পানির মালিকের কাছে। শাহ আলম তার সন্তান খুনি সানবীর কে বাচাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরকে ২০ কোটি টাকা দিয়েছিল। আওয়ামীলীগ নেতা কামাল মজুমদারের ছেলে খুনি জুয়েল এখনো বহাল দেশে আছে; প্রকাশ্য দিবালোকে এক ব্যবসায়ীকে সবার সামনে হত্যা করার পরও।

সংবিধানের ৪৯ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে:


৪৯.কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।

এখান ৪৯ নং অনুচ্ছেদ পরিমার্জন সময়ের দাবী।
এখন সময়ের দাবী এটা পরিমার্জন করা। অন্তত যেসব অপরাধ যা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে সেসব হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষমা করার সময় যেন রাষ্ট্রপতির হত্যাকান্ডের স্বীকার ব্যক্তির আপন ঔরসজাত সন্তানদের অনুমতি নিতে হয় কিংবা সন্তানরা নাবালক হলে তার নিজ আপন পিতামাতার অনুমতি নিতে হয়। কেননা কোন সরকারের দ্বারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ-কারী আসামী ক্ষমা প্রাপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা পরবর্তী সময় ক্ষমতায় আসা ভিন্ন সরকার নিতে পারবে। কিন্তু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধকারী আসামী ক্ষমা প্রাপ্ত হলে ওই দুর্ভাগা ব্যক্তির পরিবারের কিবা করার থাকতে পারে । তখন শুধু এই নুরুল ইসলামের বিধবা স্ত্রী রাশিদা ইসলামের মত বলতে পারে
"আপনজন মরলে কেমন কষ্ট, রাষ্ট্রপতি তা নিশ্চয় বোঝেন। তাঁর স্ত্রী আইভি রহমান সন্ত্রাসীদের হাতেই তো খুন হয়েছেন। এখন আইভি রহমানের খুনিরা আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি কি তাদের ক্ষমা করবেন?’‘প্লিজ, রাষ্ট্রপতির কাছে আমার এই প্রশ্নটি আপনারা ছাপাবেন। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমার এটা জানার অধিকার আছে। প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁর বাবার হত্যাকারীর বিচার চাইতে পারেন, আমার ছেলেমেয়েদের কি দোষ? তারা কেন তাদের বাবা, হত্যার বিচার পাবে না? প্রধানমন্ত্রী তবু বাবার কবর জিয়ারত করে কিছুটা কষ্ট কমাতে পারেন; আমার সন্তানেরা তো বাবার কবরও পেল না, লাশটাও দেখল না।"


-----------------------------------------XXXXXXXX--------------------------------------------------------



প্রবন্ধটি ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সালে সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment