Sunday, June 24, 2012

চর্যাপদ - বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন (চর্যাপদের উপর প্রাথমিকতথ্য…… পোষ্টটি বাংলা ভাষাতত্ত্ব - সাহিত্যর ছাত্র, পেশাজীবি এবং সংস্কৃতি উদ্যমীগণের জন্য নয় )

[চর্যাপদ - ১, রাগ-পটমঞ্জরী]
(লুইপাদানাম)
কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পইঠা কাল।।
দিঢ় করিঅ মহাসুহ পরিণাম।
... .........লুই ভণই গুরু পুছিঅ জাণ।।
সঅল সমাহিঅ কাহি করিঅই।
সুখ দুখেতে নিচিত মরিঅই।।
এড়িঅই ছাঁদ বান্ধ করণ কপ্টের আস।
সূনু পথে ভিড়ি লাহু কররে পাস।।
ভণই লুই আমহে ঝাণে দীঠা।
ধ্মণ চবণ বেণী পিন্ডী বইঠা।।

----------------------------------------------------------------------------
**************************************************
----------------------------------------------------------------------------
প্রথম প্রদীপ: চর্যাপদ
ড. হুমায়ুন আজাদ

বাঙলা ভাষার প্রথম বইটির নাম বেশ সুদূর রহস্যময়। বইটির নাম চর্যাপদ। বইটির আরো কতকগুলো নাম আছে। কেউ বলেন এর নাম চর্য্যাচর্য্যাবিনিশ্চয়, আবার কেউ বলেন এর নাম চর্য্যাশ্চর্য্যাবিনিশ্চয়। বড়ো বিদঘুটে খটমটে এ-নামগুলো। তাই এটিকে আজকাল যে মনোরকম নাম ধরে ডাকা হয়, তা হচ্ছে চর্যাপদ। বেশ সহজ সুন্দর এ নাম। বইটির কথা বিশ শতকের গোড়ার দিকেও কেউ জানতো না। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ। পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রাসাদ শাস্ত্রী ওই বছর যান নেপালে। নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে আবিস্কার করে তিনি নিয়ে আসেন কয়েকটি অপরিচিত বই। এ-বইগুলোর একটি হচ্ছে চর্যাপদ। চর্যাপদ-এর সাথে আরো দুটি বই- ডাকার্ণব ও দোহাকোষ, যেগুলোকে তিনি নেপারের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ-এর সাথেই আবিষ্কার করেছিলেন- মিলিয়ে একসাথে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা (১৩২৩) নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এ-বই বেরোনোর সাথে সাথে সারা দেশে সাড়া পড়ে যায়, সবাই বাঙলা ভাষার আদি নমুনা দেখে বিস্মিত চকিত বিহ্বল হয়ে পড়ে। শুরু হয় একে নিয়ে আলোচনা অর আলোচনা। বাঙালি পণ্ডিতেরা চর্যাপদকে দাবি করেন বাঙলা বলে। কিন্তু এগিয়ে আসেন অন্যান্য ভাষার পণ্ডিতেরা। অসমীয়া পণ্ডিতেরা দাবি করেন একে অসমীয়া ভাষা বলে, ওড়িয়া পণ্ডিতেরা দাবি করেন একে ওড়িয়া বলে। মৈথিলিরা দাবি করেন একে মৈথিলি ভাষার আদিরূপ বলে, হিন্দিভাষীরা দাবি করেন একে হিন্দি ভাষার আদিরূপ বলে। একে নিয়ে সুন্দর কাড়াকাড়ি পড়ে যায়।

এগিয়ে আসেন বাঙলার সেরা পণ্ডিতেরা। ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ইংরেজিতে একটি ভয়াবহ বিশাল বই লিখেন বাঙলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ (১৯২৬) নামে, এবং প্রমাণ করেন চর্যাপদ আর কারো নয়, বাঙালির। চর্যাপদ-এর ভাষা বাঙলা। আসেন ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ডক্টর সুকুমার সেন, ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত। তাঁরা ভাষা, বিষয়বস্তু প্রভৃতি আলোচনা করে প্রমাণ করেন চর্যাপদ বাঙলা ভাষায় রচিত; এটি আমাদের প্রথম বই। চর্যাপদ জ্বলে ওঠে বাঙলা ভাষার প্রথম প্রদীপের মতো, আলো দিতে থাকে আমাদের দিকে, আর আমরা সে-আলোতে পথ দেখে দেখে হাজার বছরের পথ হেঁটে আসি। সত্যিই আজ বিশশতকের শেষাংশে দাঁড়িয়ে এ বইয়ের দিকে তাকালে একে প্রদীপ না বলে থাকা যায় না। এ প্রদীপের শিখা অনির্বাণ। জ্বলে চিরকালের উদ্দেশে।

চর্যাপদ কতকগুলো পদ বা কবিতা বা গানের সংকলন। এতে আছে ৪৬টি পূর্ণ কবিতা, এবং একটি ছেঁড়া খণ্ডিত কবিতা। তাই এতে কবিতা রয়েছে সাড়ে ছেচল্লিশটি। এ-কবিতাগুলো লিখেছিলেন ২৪ জন বৌদ্ধ বাউল কবি, যাঁদের ঘর ছিলো না, বাড়ি ছিলো না; যাঁরা ঘর চান নি, বাড়ি চান নি। সমাজের নিচুতলার অধিবাসী ছিলেন আমাদের ভাষার প্রথম কবিকুল। তাঁদের নামগুলোও কেমন কেমন; নাম যে এমন হতে পারে, তা তাঁদের নামগুলো শোনার আগে ভাবতেও পারা যায় না। কিছু নাম: কাহ্নপাদ, লুইপাদ, সরহপাদ, চাটিল্লপাদ, ডোম্বিপাদ, ঢেন্টণপাদ, শবরপাদ। সবার নামের শেষে আছে 'পাদ' শব্দটি। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন কাহ্নপাদ। কাহ্নপাদের অন্য নাম কৃষ্ণাচার্য। তাঁর লেখা কবিতা পাওয়া গেছে বারোটি। ভুসুকুপাদ লিখেছেন ছটি কবিতা, সরহপাদ লিখেছেন চারটি, কুক্কুরিপাদ তিনটি; লুইপাদ, শান্তিপাদ, শবরপাদ লিখেছেন দুটি করে কবিতা, বাকি সবাই লিখেছেন একটি করে কবিতা।

এ কবিতাগুলো সহজে পড়ে বোঝা যায় না; এর ভাষা বুঝতে কষ্ট হয়, ভাব বুঝতে হিমশিম খেতে হয়। কবিরা আসলে কবিতার জন্যে কবিতা রচনা করেন নি; এজন্যেই এতো অসুবিধা, পদে পদে পা পিছলে পড়ার সম্ভাবনা। আমাদের প্রথম কবিরা ছিলেন গৃহহীন বৌদ্ধ বাউল সাধক। তাঁদের সংসার ছিলো না। তাঁরা সাধনা করতেন গোপন তত্ত্বের। সে তত্ত্বগুলো তাঁরা কবিতায় গেঁথে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে একমাত্র সাধক ছাড়া আর কেউ তাঁদের কথা বুঝতে না পারে। তাই যখন প্রাচীন ভাষাটি বেশ রপ্ত করে পড়তে যাই চর্যাপদ, দেখি এর কথাবার্তাগুলো কেমন হেঁয়ালির মতো। একবার মনে হয় বুঝতে পারছি, পরমুহূর্তে মনে হয় কিছু বুঝছি না। চর্যাপদ পড়ার মানে হলো চমৎকার ধাঁধার ভেতরে প্রবেশ করা। কিন্তু এ-কবিতাগুলোতে শুধু ধর্মের কথাই নেই, আছে ভালো কবিতার স্বাদ। আছে সেকালের বাঙলার সমাজের ছবি, আর ছবিগুলো এতো জীবন্ত যে মনে হয় এইমাত্র প্রাচীন বাঙলার গাছপালা, আর সাধারণ মানুষের মধ্যে একটু হেঁটে এলাম। আছে গরিব মানুষের বেদনার কথা, রয়েছে সুখের উল্লাস। বর যাচ্ছে বিয়ে করতে তার ছবি আছে, গম্ভীরভাবে গভীর নদী বয়ে যাচ্ছে তার চিত্র রয়েছে, ফুল ফুটে আকাশ ঢেকে ফেলেছে তার দৃশ্য আছে, পাশা খেলছে লোকেরা তার বর্ণনা আছে। একটি কবিতায় এক দুঃখী কবি তাঁর সংসারের অভাবের ছবি এতো মর্মস্পর্শী করে এঁকেছেন যে পড়তে পড়তে শিউরে উঠতে হয়। কবির ভাষা তুলে দিচ্ছি:

টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী।

ঘাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী।

বেঙ্গ সংসার বড়হিল জাঅ।
দুহিল দুধ কি বেন্টে ষামায়।



কবি বলেছেন, টিলার ওপরে আমার ঘর, আমার কোনো প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে আমার ভাত নেই, আমি প্রতিদিন উপোস থাকি। বেঙের মতো প্রতিদিন সংসার আমার বেড়ে চলছে, যে-দুধ দোহানো হয়েছে তা আবার ফিরে যাচ্ছে গাভীর বাঁটে। বেশ করুণ দুঃখের ছবি এটি। কবি যে খুব দরিদ্র শুধু তাই নয়, তাঁর ভাগ্যটি বেশ খারাপ। তাই বলেছেন, দোহানো দুধ ফিরে যাচ্ছে আবার গাভীর বাঁটে। এরকম বেদনার কথা অনেক আছে চর্যাপদ-এ, আছে সমাজের উঁচুশ্রেণীর লোকের অত্যাচারের ছবি। তাই কবিরা সুযোগ পেলেই উপহাস করেছেন ওই সব লোকদের। আজকাল শ্রেণীসংগ্রামের কথা বেশ বলা হয়; শ্রেণীসংগ্রামের জন্যে রচিত হয় সাহিত্য। বাঙলা সাহিত্যে শ্রেণীসংগ্রামের সূচনা হয়েছিলো প্রথম কবিতাগুচ্ছেই। এ- কবিতাগুলোতে আছে অনেক সুন্দর সুন্দর উপমা; আছে মনোহর কথা, যা সত্যিকার কবি না হলে কেউ বলতে পারে না। একজন কবি একটি জিনিস সম্বন্ধে বলেছেন, সে জিনিসটি জলে যেমন চাঁদের প্রতিবিম্ব পড়ে, তার মতো সত্যও নয়, আবার মিথ্যেও নয়। এশ্ছরকম চমৎকার কথা অনেক পরে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ 'সাধারণ মেয়ে' নামক একটি বিখ্যাত কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'হীরে বসানো সোনার ফুল কি সত্য, তবু কি সত্য নয়?' সোনায় বানানো হীরেবসানো ফুলতো আর সত্যিকার ফুল নয়, ওটা হচ্ছে বানানো মিছে ফুল। ও ফুল বাগানে ফোটে না, তবু আমরা তাকে ফুল বলি। আরো একজন কবি, যাঁর নাম মম্বলাম্বরপাদ, তাঁর ধনসম্পদের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন:

সোণে ভরিতী করুণা নাবী।
রূপা থুই নাহিক ঠাবী।।



কবি বলেছেন, আমার করুণা নামের নৌকো সোনায় সোনায় ভরে গেছে। সেখানে আর রুপো রাখার মতো তিল পরিমাণে জায়গা নেই। একথা পড়ার সাথে সাথে মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা 'সোনার তরী'র সেই পংক্তিগুলো, যেখানে কবি বলেছেন, 'ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী, আমার সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।' এক কবি বলছেন, হরিণের মাংসের জন্যে হরিণ সকরের শত্রু; আরেকজন বলছেন, শরীরটি হচ্ছে একটি বৃক্ষ পাঁচটি তার ডাল। সবচেয়ে ভালো কবিতাটি লিখেছেন কবি শবরীপাদ। তিনি আনন্দের যে- ছবি এঁকেছেন তা তুলনাহীন। কবি হৃদয়ের সুখে বিভোর হয়ে আছেন, যেমন মানুষ থাকে স্বপ্নে। তাঁর কিছু পংক্তি তুলে দিচ্ছি:

উষ্ণা উষ্ণা পাবত তর্হি বসই সবরী বালী।

মোরঙ্গী পীচ্ছ পরহিণ সবরী গিবত গুঞ্জরীমালী।

উমত সবরো পাগল সবরো মা কর গুলী গুহাড়া তোহোরি।

ণিঅ ঘরিণী নামে সহজ সুন্দরী।
ণাণা তরুবর মৌলির রে গলণত লাগেলী ডালী।।


এর কথাগুলো যেমন সুন্দর, তেমনি মনমাতানো এর ছন্দ। কবি নিজের রূপসী স্ত্রী নিয়ে মহাসুখে আছেন। বলছেন, উঁচু উঁচু যেখানে পাহাড় সেখানে বাস করে শবরী বালিকা। তার পরিধানে ময়ূরের বহুবর্ণ পুচ্ছ, গলায় আছে গুঞ্জা ফুলের মালা। তারপর কবি নিজের উদ্দেশে বলছেন, হে অস্থির পাগল শবর, তুমি গোল বাঁধিও না, এ তোমার স্ত্রী, এর নাম সহজসুন্দরী। শেষ যে- পংক্তিটি তুলে এনেছি তাতো আনন্দের এবং প্রকৃতি বর্ণনার অনিন্দ্য উদাহরণ। বলছেন, অসংখ্য গাছে মুকুল ধরেছে, আর আকাশে ফুর মুকুল আর শাখাপুঞ্জ নড়ে ওঠে। আমরা আবেগে কবি হয়ে ওঠি। চর্যাপদ-এর সবগুলো কবিতা ছন্দে রচিত, পংক্তির শেষে আছে মিল। এগুলো আসলে গান, তাই কবিরা প্রতিটি কবিতার শুরুতে কোন সুরে কবিতাটি গাওয়া হবে, তার উল্লেখ করেছেন। এমন কয়েকটি সুর বা রাগের নাম: রাগ পটমঞ্জরী, রাগ অরু, রাগ ভৈরবী। বাঙলা কবিতায় ১৮০০ সালের আগে যা কিছু রচিত হয়েছে, সবই রচিত হয়েছে গাওয়ার উদ্দেশ্যে। আজকাল আমরা কবিতা পড়ি, গাই না। আগে কবিরা কবিতা গাইতেন, পাঠকেরা শুনতো কবির চারদিকে বসে। মাইকেল মুধুসূধন দত্ত যে- দিন কবিতা লিখলেন সে দিন থেকে কবিতা হয়ে উঠলো পড়ার বস্তু, গাওয়ার নয়। চর্যাপদ-মর কবিতাগুলো গাওয়া হতো। তাই এগুলো একই সাথে গান ও কবিতা। বাঙালির প্রথম গৌরব এগুলো।

----------------------------------------------------------------------------
**************************************************
----------------------------------------------------------------------------

[চর্যাপদ - ৫০, রাগ-রামক্রী]
(শবরপাদানাম)

গঅণত গঅণত তইলা বাড়ী হিএঁ কুরাড়ী।
কন্ঠে নইরামণি বালি জাগন্তে উপাড়ী।।
... ... ছাড় ছাড় মাআ মোহা বিসমে দুন্দোলী।
মহাসুহে বিলসন্তি সবরো লইআ সূণ মেহেলী।।
হেরি সো মোরি তইলা বাড়ী খসমে সমতুলা।
সুকল এ মোরে কপাসু ফুটিলা।।
তইলা বাড়ী পাসেঁ রে জোহ্না বাড়ী তা এলা।
ফিটেলী আন্ধারি রে আকাস ফুলিলা।।
কঙ্গুচিনা পাকেলা রে সবরাসবরি মাতেলা।
অণুদিণ সবরো কিম্পি ণ চেবই মহাসুহেঁ ভোলা।।
চারিবাঁসে গরিলারে দিআঁ চঞ্চালী।
তহিঁ তোলি সবরো ডাহ কএলা কান্দই সন্ডণ সিআলী।।
মারিঅ ভবমত্তা রে দহ দিহে দিধলি বলী।
হের সে সবরো নিরেবণ ভইলা, ফিটিলি সবরালী।।

----------------------------------------------------------------------------
**************************************************
----------------------------------------------------------------------------
অসাধারন কিছু লিঙ্ক-

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট-
1. View this link


2. View this link

চর্যাপদ সংকলন-
1.View this link

ফেসবুক পেজ-
1.View this link

প্রচলিত আধুনিক  বাংলায় অনুবাদ-
1. View this link

2. View this link

ইংরেজী অনুবাদ-
1. View this link

---------------------------X-----------------------------

লেখাটি ২৭ই নভেম্বর, ২০১১ সালে প্রথম সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।সামহোয়্যার ইন ব্লগে লেখাটির লেখাটির লিঙ্ক।

আজ একই সাথে ওয়ার্ড প্রেস ব্লগে প্রকাশিত 

Friday, June 22, 2012

নোবেল পুরুস্কারের সাতকাহন........

[img|http://listenrecovery.files.wordpress.com/2011/01/2010nobelprizeliteraturemariovargasllosaperu.jpg]  

[sb]
যাদের নোবেল পুরস্কার না দিতে পেরে নোবেল পুরস্কার নিজেই বিব্রত[/sb]

[sb]মহাত্মা গান্ধীঃ[/sb] পাঁচ বার মনোনীত হয়েছেন। ১৯৪৯ সালে হঠাত হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হলে নোবেল কমিটির টনক নড়ে, একটু বেশিই দেরি হয়ে গিয়েছিল। ১৯৪৯ সালে অন্য অনেকে পাবার যোগ্য হলেও ওই বছর শান্তিতে পুরস্কার কাওকেই দেওয়া হয়নি। কারণ নোবেল কমিটি সত্যি বিব্রত হয়ে গিয়েছিল।

[sb]নিকোলাস টেসলাঃ[/sb] যারা তড়িৎ প্রকৌশল কিংবা পদার্থ বিজ্ঞানে পড়ালেখা করেছেন তারা জানেন তাঁর কথা। গোটা আধুনিক প্রাক্টিক্যাল পাওয়ার এবং ট্রান্সমিশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভিত্তি তিনি করে গিয়েছেন। তিনি শুধু উদ্ভাবক ছিলেননা একাধারে বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীও ছিলেন। তাঁর করে যাওয়া পাওয়ার ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি, শুধু উন্নয়ন হয়েছে। সেই সাথে তিনি আক্ষরিক আর্থেই রেডিওর আবিষ্কারক।

[sb]লিও টলস্তয়ঃ[/sb] ওয়ার এন্ড পিস খ্যাত বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং সম্ভবত আজ পর্যন্ত জন্ম নেওয়া শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক।

[sb]মার্ক টোয়াইনঃ[/sb] আধুনিক আমেরিকান উপন্যাসের পুরোধা যেমন বঙ্কিম চন্দ্র বাংলা উপন্যাসের। বিশ্বরে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক এবং ছোট গল্পকার। খুব কম শিক্ষিত মানুষই আছেন যারা তার বিখ্যাত শিশুতোষ হাকালব্যারী ফিন কিংবা টমসয়ার পড়েননি।

[sb]ডিমিত্রি মেনদেলেভঃ[/sb] মেন্ডেলেফ পিরিয়ডিক টেবিলকে এমনভাবে সংশোধন করেছেন যেন যেকোনো অনাবিস্কৃত মৌল পদার্থের মৌলিক বৈশিষ্ট্যর ধারনা পাওয়া যায়। তিনি যেসব ঘর খালি রেখেছিলেন সেসব ঘর এখন পূর্ণ, এখনো একেবারে একবিংশ শতাব্দীতে আবিস্কৃত অনেক মৌল কয়েকটি ঘর ফাকা রেখে পরে বসানো হয়েছে। পিরিয়ডিক  টেবিল আক্ষরিক অর্থেই রসায়ন গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। নোবেল কমিটি ওই সময় এর গুরুত্ব টের পায়নি।

[sb]আয়ালবার্ট স্কার্টজঃ[/sb] গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বিধ্বংসী বিশেষত টিউবারকোলসিস রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারক। এর আগের আবিষ্কৃত পেনিসিলিন শুধু গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী ছিল।

[sb]লইস মেইটনারঃ [/sb]নিউক্লিয়ার ফিসনে গবেষক, যিনি প্রস্তাবনা করেছিলেন নিউক্লিয়ার ফিসনের সময় হারানো ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

[sb]গিলবার্ট লুইসঃ[/sb] কভ্লেন্ট বন্ড সহ আরো অনেক কিছুর আবিষ্কারক, বহুবার বার মনোনীত কিন্তু পুরস্কার পাননি।

[sb]পুরস্কার পাননি তবে তাদের গবেষণার উপর ভিত্তি করে অন্যরা পেয়েছেন পরবর্তীতে [/sb]

[sb]সত্যন্দ্রতাথ বোসঃ[/sb] ১৯২০ বোস আইস্টাইন তত্ত্বের যৌথ-আবিষ্কারক । ২০০১ সালে এটার উপর গবেষণা করার কারণে অন্যদের পুরুস্কৃত করা হয়।

[sb]ডগ্লাস প্যাশারঃ [/sb]একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন আবিষ্কার করেছিলেন সেই ১৯৮০র দশকে। তাঁর গবেষণার ভিত্তি করে কাজের জন্য পরে তিন জন ২০০৮ সালে নোবেল পান এবং তাঁরা প্যাশনারের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

[sb]জুলিয়াস লিলেনফিল্ডঃ[/sb] ১৯২৮ সালের তার পেপারের উপর ভিত্তি করেই ১৯৫৬ সালে বাই পোলার জাংশন ট্রানজিস্টার উদ্ভাবনের জন্য নোবেল দেওয়া হয়।

[sb]অস্কার হেইলঃ[/sb] ১৯৩৬ সালেই ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টার আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর পেপারের সাহায্য এই ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টারের উন্নয়ন করে পরে অন্যরা নোবেল পান।

[sb]চাং ইয়াও চাওঃ[/sb] (১৯৩০) তার গবেষণার উপর ভিত্তি করে পজিট্রন আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৬ সালে অপর আরেকজন পুরস্কৃত হন।

[sb]হারম্যান ওয়াই কারঃ[/sb] (১৯৫০): ব্যবহারিক এম আর আই ডিজাইন করেন যদিও তখন এটা ততটা স্বীকৃত পায়নি। ২০০৩ সালে অপর দুইজন পুরস্কার পান যারা তারই গবেষণার উপর ভিত্তি করেই আধুনিক এমআরআই ডিজাইন করেছিলেন।
 
[sb]যাদের নোবেল পুরস্কার দিয়ে নোবেল পুরস্কার প্রশ্নবিদ্ধ
[/sb]

[sb]হেনরি কিসিঞ্জারঃ [/sb]১৯৭৩ সালে শান্তিতে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ খ্যাত লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী। বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে তার নাম জড়িয়ে আছে।

[sb]আইজ্যাক রবিনঃ[/sb] ১৯৯৪ তে শান্তিতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীর জনক। হাজার হাজার প্যালাস্টানীয় মৃত্যর জন্য দায়ী।

[sb]শিমন প্যারেজঃ [/sb]১৯৯৪ তে শান্তিতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীর জনক। হাজার হাজার প্যালাস্টানীয় মৃত্যর জন্য দায়ী।

[sb]কর্ডেল হালঃ [/sb]১৯৪৫ সালে শান্তিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ গন্তব্যে যাওয়া ইহুদী শরণার্থী জাহাজ জার্মানিতে ফিরিয়ে দেবার মূল কুশীলব। ওই জাহাজের অনেক মানুষ নাৎসি হত্যাকান্ডের স্বীকার।

[sb]মেনাহিম বেগানঃ [/sb]১৯৭৮ সালে শান্তিতে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীর জনক। হাজার হাজার প্যালাস্টানীয় মৃত্যর জন্য দায়ী।

[sb]তাদের কি কারণে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তা অনেকে বুঝতে পারেননা[/sb]

[sb]বারাক ওবামাঃ [/sb]২০০৯ সালে শান্তিতে। চামচা এবং অ্যাডমায়ারারদের অতি উৎসাহের ফল। ওবামা নিজেও নিশ্চিত নন তিনি কেন পেয়েছেন। হয়ত ভবিষ্যৎ কোন কাজের জন্য আগাম পুরস্কার প্রদান।

[sb]আল গোরঃ[/sb] ২০০৭ সালে যৌথ ভাবে শান্তিতে। তিনি পরিবেশ আন্দোলনের জন্য পেয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হল তাঁর মত আরও অনেকেই এমন আন্দোলন করছে। তাঁর সুবিধা ছিল তিনি আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁর অনেক অ্যাডমায়ারার ওই নোবেল কমিটির মেম্বার ছিলেন। তিনি  পরিবেশ বিষয়ক একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন কিংবা প্রযোজনা করেছিলেন এবং সেখানে বর্ণনা করেছেন “পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল” যার জন্য তিনি অস্কার পান এবং পরে নোবেলও। যদিও তিনি পরিবেশ বাচাতে চান তাঁর আপন সুযোগ সুবিধার ব্যাপারটা ঠিক রেখে। তার বিরুদ্ধে অনেক গুলো অভিযোগগুলোর একটি হল তাঁর বাসভবনের বিলাস ব্যবস্থার জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় ।

[sb]ওয়াঙ্গারি মাথাইঃ[/sb] ২০০৪ সালে শান্তিতে। তাঁর কথা মনে হলেই আমার আমাদের দেশের কতগুলো লোকের কথা মনে পরে যায়। যাদের বৃক্ষ রোপণ তাঁর থেকেও বেশি। তিনি মূলত তাঁর নিজ দেশে গাছ লাগানোর আন্দোলনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। যাই হোক, তিনি আরও বিশ্বাস করেন HIV AIDS মূলত পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের আফ্রিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র; ব্যাপারনা একটু একটু কুসংস্কার থাকতেই পারে।

[sb]জিমি কার্টারঃ[/sb] ২০০২ সালে শান্তিতে। তিনিও সাবেক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তিনি যে ঠিক কি কারণে পুরস্কার পেয়েছেন তাও অস্পষ্ট।

[sb]রিগবেরতা মেঞ্ছুঃ [/sb]১৯৯২ সালে শান্তিতে। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার উপর একটি আত্মজীবনী লিখেছিলেন। তবে সাহিত্যে না পেয়ে শান্তিতে পেয়েছেন। অন্যান্য অনেক আত্মজীবনীর মতও ওখানে টুকটাক অতিকথন ছিল। যাই হোক নোবেল কমটি তখন বিষয়টি খেয়াল করেননি।

[sb]মিখাইল গর্বাচেভঃ[/sb] ১৯৯০ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন । সন্দেহ নেই তিনি পশ্চিমা দুনিয়ায় শান্তির বন্যা নিয়ে এসেছেন তবে তাঁর আপন মাতৃভূমির চরম ক্ষতি করে। তিনি আক্ষরিক অর্থেই উত্তর আমেরিকা, উত্তর এবং পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ গুলোর চিন্তা অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তাকে পশ্চিমারা শান্তি পুরস্কার না দিয়ে আর কাকে প্রদান করবে।

[sb]জন ম্যাকলোল্ডঃ [/sb]১৯২৩ সালে গবেষণা না করেই ফ্রেড্রিক ব্যান্টিঙ্গের সাথে যৌথ ভাবে চিকিৎসা শাস্ত্রে পুরুস্কৃত; একেবারে মুফতে পুরুস্কার। তিনি ব্যান্টিঙ্গকে ল্যাব ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন কিছু সময়ের জন্য।

[sb]ইয়াসির আরাফাতঃ[/sb] ১৯৯৪ সালে শান্তিতে। কি শান্তি এনেছেন তা অনিশ্চিত।

[sb]নোবেল প্রাইজ ভুল[/sb]

[sb]কার্ল ভন ফ্রিঞ্জঃ [/sb]১৯৭৩ সালে চিকিৎসা। মৌমাছির জীবন নিয়ে একটি তত্ত্বের জন্য পুরষ্কৃত হন। তত্ত্বটি পরে ভুল বলে প্রমাণিত হয়।

[sb]এন্টোনিটয় ইগাজ মোনিজঃ[/sb] ১৯৪৯ সালে চিকিৎসা। তার উদ্ভাবিত “লোবটোমি” শল্য  চিকিৎসা পদ্ধতি যার জন্য পুরুস্কার পেয়েছিলেন তা পরবর্তীতে শল্য চিকিৎসায় বাতিল হয়।
জোহান ফিবজারঃ “স্পাইরোপেট্রা কারসিনোমা” নামক প্যারাসাইটের কারণে ক্যান্সার হওয়ার কারণ  “আবিষ্কার”  করার কারণে নোবেল পুরস্কার পান ১৯২৬ সালে চিকিৎসায়। তাঁর সেই আবিষ্কার  এখন চিকিতসা সমাজে বাতিল।

[sb]এনরিকো ফার্মিঃ[/sb] ১৯৩৮ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে। নিউক্লিয়ার ইরিডেশনের মাধ্যমে নতুন মৌল অবস্থানের “আবিষ্কার” করার জন্য পান যা পরে ভুল প্রমাণিত। যদিও তাঁর অন্য কয়েকটি আবিষ্কারের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন।

[sb]স্ট্যানলি প্রুশিনারঃ[/sb] ১৯৯৭ সালে চিকিৎসা। প্রাইয়োন আবিষ্কারের জন্য। এটা রোগের কারণ না অন্যান্য রোগের উপসর্গ তা এখনো বিতর্কিত।

[sb]সরকারি নিষেধাজ্ঞার জন্য যারা নোবেল প্রাইজ ঠিক সময়ে গ্রহণ করতে পারেননি[/sb]

নাৎসি জার্মানিতে ৪ জন বিজ্ঞানীঃ [sb]কার্ল ওসেটজকি [/sb](১৯৩৫ শান্তি), [sb]গেরহার্ড ডোমাগ[/sb] (১৯৩৯ চিকিৎসা),[sb]রিচার্ড কান[/sb] (১৯৩৮ রসায়ন), [sb]আয়ডোলফ বুটেনালফ [/sb](১৯৩৯ রসায়ন) এবং সোভিয়েত ইউনিঊনে [sb]বরিস প্যাস্টারনার্ক [/sb](১৯৫৮ সাহিত্য) সরাসরি সরকারি নিষেধাজ্ঞার জন্য সঠিক সময়ে পুরুস্কার গ্রহণ করতে পারেননি। তবে তাদের প্রত্যকেই বিভিন্ন ভাবে পুসুকার গ্রহণ করেছিলেন।

[sb]নোবেল প্রাইজকে যারা থোরাই কেয়ার করেছেন[/sb]

[sb]জন প্ল সাত্রেঃ [/sb]১৯৬৪ সালে সাহিত্যে পুরুস্কার পেয়েছিলেন কিন্তু নিতে অস্বীকার।

[sb]লি ডাক থোঃ [/sb]১৯৭৩ সালে শান্তিতে পেয়েছিলেন, তবে তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন তাঁর দেশ ভিয়েতনামে শান্তি আসেনি তাই তিনি পুরুস্কার নিতে অপারগতা দেখিয়েছিলেন।

[sb]নোবেল পুরস্কার এবং বিজ্ঞানীদের জ্ঞানময় বৈশ্বিক জোচ্চুরি এবং হঠকারিতা[/sb]

[sb]মেল্ভিন ক্যালভিনঃ[/sb] ১৯৬১ সালে রসায়ন শাস্ত্রে। তিনি এন্ড্রু জনসন এর সাথে তাঁর যৌথ গবেষণা পত্রটি নিজনামে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করে দেন। যদিও পরে জনসনের আইনি ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এই নীচ কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন এবং এন্ড্রু জনসনকে স্বীকৃতি দিতে এবং নোবেল জ্যে প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক তাঁকে দিতে বাধ্য হন।

[sb]সেলম্যান ওয়াকস্ম্যানঃ[/sb] ১৯৫২ সালে চিকিৎসায়। তিনিও অ্যালবার্ট সার্টজ এর সাথে তাঁর যৌথ গবেষণা নিজের নামে চালিয়ে দেন। পরে আইনি লড়াইয়ে বাধ্য হন অ্যালবার্ট সার্টজ এর অবদানকে স্বীকার করে নিতে।

[sb]কার্লো রুবিয়াঃ[/sb] ১৯৮৪ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে। সার্ন (CERN – ইউরোপীয় নিউক্লিয়ার গবেষণা সংস্থা) এর বিভিন্ন টিম এর একটির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। অন্য একটি টিমকে গবেষণা প্রকাশ না করে আরও বিস্তারিত আবিষ্কারের পর তা প্রকাশ করতে অনুরোধ করেন; তারা সরল বিশ্বাসে এমন করলে তিনি নিজেই কিছুদিন পর নিজ নামে ওই একই গবেষণা পত্র আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করে দেন এবং ওটার উপরই তাঁকে নোবেল দেওয়া হয়।

[sb]গুগ্লিয়েমো মার্কনিঃ[/sb] ১৯০৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে। তিনি মোট দুজন বিজ্ঞানীর সাথে জোচ্চুরি করেছেন; নিকোলাস টেসলা এবং জগদীশ চন্দ্র বসু। দুজনই তাঁর আগে রেডিও/ তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার সফল ব্যবহারিক প্রদর্শন করেন। এমনকি টেসলা মার্কনির আগেই তাঁর প্যাটান্ট জমা দেন (দুঃখজনক ভাবে বসু ঐসময় প্যাটান্টে আগ্রহী ছিলেননা যদিও পরে করিয়েছিলেন)। মার্কনি তাঁর পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে টেস্লার প্যাটেন্ট আটকে দেন এবং নিজেরটা আগে পাস করিয়ে নেন। যদিও অন্যায় ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায়না। ১৯৪২ সালে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট রেডিও আবিষ্কারের প্রথম অফিসিয়াল কৃতিত্ব টেস্লাকে প্রদান করে।

[sb]নোবেল পুরুস্কার নিজেই যেখানে প্রশ্ন বিদ্ধ[/sb]

আলফ্রেড নোবেল তাঁর উইলে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র, শরীর বিদ্যা এবং চিকিৎসা শাস্ত্র, শান্তি এবং সাহিত্য পুরস্কার দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন। অর্থনীতির কথা তিনি কোথাও উল্লেখ করেননি। ১৯৬৯ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইচ্ছায় অর্থনীতিতেও “নোবেল পুরস্কার” দেওয়া শুরু হয়। তখন এর নাম দেওয়া হয়েছিল “আলফ্রেড নোবেলের তরে উৎসর্গীকৃত স্মৃতি পুরস্কার”। এর পরে আরও ৮ বার এর নাম পরিবর্তন করা হয়। এবং বর্তমান নাম “আলফ্রেড নোবেল স্মৃতি ভ্যারিজ রিকজ ব্যাংক অর্থনীতি পুরস্কার”। এছাড়া নোবেলের পরিবারের উত্তরসূরি আইনজীবী পিটার নোবেল   অর্থনীতিতে পুরস্কার দেওয়ার সমালোচনা করে বলেছিলেন এটা “নোবেল” পরিবারের পারিবারিক নামের অপব্যবহার।  অন্যান্য ৫ টি ক্ষেত্রে পুরস্কারকে শুধু “নোবেল পুরস্কার” হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়।

আবার উল্টো ভাবে বললে, অনেকে সমালোচনা করেন, গণিতের জন্য কোন নোবেল পুরস্কার নেই এবং এই বিষয়ে দেওয়া উচিত।

[sb]পুনশ্চঃ[/sb]

অর্থনীতির পুরস্কারের সবচাইতে বড় অভিযোগ হল এক্ষেত্রে শুধু পশ্চিমা ম্যাক্রো পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে গবেষণার জন্য এটা দেওয়া হয়।

নোবেল নিয়ে সবচাইতে বিতর্ক শান্তি এবং সাহিত্য তে পুরস্কার নিয়ে।শান্তি পুরস্কার আক্ষরিক অর্থেই পশ্চিমাদের “খুশি এবং সান্ত্বনা” পুরস্কারে রূপান্তরিত হয়েছে এবং ব্যাপক রাজনৈতিক দোষে দুষ্ট।

সাহিত্য পুরস্কার অনেক অর্থে তার সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। অনেক অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক এই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি। আবার এমন অনেক লেখক পেয়েছেন যার কারণ অনেক সাহিত্যিক সমালোচকরা খুঁজে পাননা।

শরীর বিদ্যা এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক সময় প্রি ম্যাচিউড় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এবং ডিসার্ভিং ব্যক্তি পুরস্কার পাননি ।

পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন শাস্ত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারে পুরস্কার দেওয়া হয়নি এবং এখানেও অনেক ডিসার্ভিং ব্যক্তি পুরস্কার পাননি। সবচাইতে বড় অভিযোগ এখানে সিংহভাগ পুরস্কার আবিষ্কারের (ডিসকভারি) জন্য দেওয়া হয়; খুব কম ক্ষেত্রীই উদ্ভাবনের (ইনভেনশন) জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

Thursday, June 21, 2012

ক্ষনিকের স্মৃতিচারণ.....


সারাদিন ভালই কাটল । কোরবানির দিন সাধারণত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয়না। সবাই যার যার পারিবারিক ব্যস্ততায় মারাত্মক ব্যস্ত হয়ে যায় তার উপর অনেক বন্ধুর তাদের কর্ম জীবনে প্রবেশের পর প্রথম ঈদ। বেশির ভাগই শুনলাম কোরবানির পশু কেনার সময় নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক ভাবে অংশগ্রহন করেছে; ব্যপক দ্বায়িত্ব  :|  আর যারা (অনধিক চার জন) বিয়ে করেছে তাদের অভিজ্ঞতা আসলেই.. আসলেই....

রাত প্রায় ১০ টায় আম্মা বললেন ঔষধ কিনতে, ছোট ভাই এবং তাঁর জন্য। ভাবলাম হেঁটেই যাই, হেমন্তের স্নিগ্ধ বাতাস উপভোগ হবে এবং সবচাইতে বড় কথা বেশ কিছুদূর হাঁটাও হবে কেননা ঠাণ্ডা লাগার পর কিছুদিন নিয়মিত দৌড় দেওয়া হচ্ছেনা, শরীর যেন কেমন জঙ্গধরা হয়ে গিয়েছে...
সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল, এলাকা থেকে বের হতেই এমন কতগুলো ঘটনার সম্মুখীন হলাম যা আমার উচ্চমাধ্যমিক-সম্মান এই প্রায় ৬-৭ বছরের স্মৃতি নাড়িয়ে দিল এবং বুঝিয়ে দিল আমি আসলেই বড় হয়ে গেছি এবং ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচন করার নুন্যতম বয়স পার করে এসেছি।

দুই গ্রুপ  (সর্বমোট ১৭-১৮ জন) ছেলে চিল্লা পাল্লা করছে আর থেমে থেমে মারপিট করছে তবে অংশগ্রহন করছে চারপাঁচ জন, কয়েকজন মোবাইলে তাদের বড়ভাই (এলাকার), কাজিন কিংবা অন্যান্য বন্ধুদের সাথে কথা বলছে; ষ্ট্র্যাটিজিক রি-ইনফোরসমেন্টের জন্য সম্ভবত এবং বাকিরা আক্ষরিক অর্থেই মজা দেখছে। এটা পুলিশ কেস হয়ে গেলে কিংবা এলাকার ময়-মুরব্বীগণের বিচার (সম্ভাবনা কম এমন এখন দেখা যায়না )বসলে এরা রাজসাক্ষী হবে। হঠাৎ মনে পরে গেল নিজের সেই দিন গুলোর কথা যখন (২০০১-০৪) ১০, ১১ এবং ১২ ক্লাশে পরতাম। আহা কতই না গুরুত্বপূর্ন ছিল এমন সব ঘটনা!!! সেইসব দিনগুলি এখন মনে হলেই হাসি পায় --- কে কখন বাটপারি করেছে , ম্যাচে অযথা আউট দিয়েছে ;), রান চুরি করেছে ;) কিংবা আরেকজনের গার্লফ্রেন্ডের কিংবা পছন্দের মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলেছে :P:P:P, গুটিবাজি করেছে :P অথাবা স্যার প্রদত্ত নোটের কথা কাওকে জানায়নি (এর মদত সাধারণত ক্লাসের প্রথম দিকের রোলধারি সহপাঠীরা দিত)... কিছুক্ষন দাড়িয়ে বুঝলাম এদের কারনটিও নেহাত কম-গুরুত্বপূর্ন নয় কেননা এদের একটি গ্রুপের ছেলেকে রিকশা ভ্রমণরত সময় আরেকটি গ্রুপের ছেলেরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে কিছু একটা করেছে... ঐ কিছুট জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হলোনা...

কিছুদূর দূরে মোড় নেওয়ার পর দেখলাম একটি গ্রুপ আড্ডা দিচ্ছে... চেহারা বলে দিচ্ছে চোখে মুখে বিশ্ব বিপ্লবেরর স্বপ্ন... কয়েকটা কে চিনি মুখ দেখা এরা বিশ্ববিদ্যাল ১ম ব ২য় বর্ষের ছাত্র.. সালাম দিল বাহ বাহ ....

মাঝে মাঝেই গাড়ি যাচ্ছে লক্ষ্য করলেই দেখা যায় এক ছেলে এবং এক মেয়ে বসা তারা বিএফ+জিএফ=কাপল... আহা..আর পথ পারি দেবার সময় পথের ধারে তুলনামূলক অন্ধকার স্থানে কিংবা গাছের আড়ালে গাড়ি থামানো দেখতে পেলাম সামান্য ব্যাতিক্রম বাদ দিলে.. বেশিভাগ ক্ষেত্রেই একটি ছড়ার স্বার্থকতা পাওয়া যায়...

গাড়ি চলে তেলে, জলে নয়....
ভালোবাসা বাড়িতে, গাড়িতে নয়.....


তবে প্রাইভেট আরোহিরা যুক্তি দেখাতে পারেন এটা “প্রাইভেট গাড়ি” তবে প্রতিযুক্তিতে তা বোধয় টিকবেনা... রাস্তাত পাবলিক..

ঔষধ কিনে ফিরে আসার সময় রাস্তায় এলাকার নাইট গার্ড মামুদের সাথে দেখা... তাদের বাক্য দ্বারা তৈল মর্দিত অতঃপর বখশিশ হিসেবে শ কয়েক প্রাপ্তি বিয়োগ...  :B#  :B#  :B#  :B#  বুঝলাম বড় হয়ে গেছি আসলেই...

ঈদ উদযাপনের একটি বিশেষ আনন্দ এখন আর কাওকে করতে দেখা যায়না তা “আতশবাজি” ফাটানো।  সেই ২য় শ্রেণী হতে একেবারে ৮ম-৯ম শ্রেনী পর্যন্ত, কৈশরে ঈদের আগের দিন এবং ঈদের দিনের মূল আকর্ষনই ছিল পটকা ফাটানো। আতশবাজি ফাটানো এখন যেটা জাতীয়-আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে অসম্ভব... হাজার হোক অনেক জঙ্গিই, কয়েক বছর আগে দেশের ৬১ টি জেলায় তাদের প্যারালাল বোমা হামলাকে পটকা ফোটানোর সাথে তুলনা করছে... তাদের তো আর সুযোগ দেওয়া যায়না...

তবে ঢাকায় একটি জেনারেশন সম্ভবত ঈদ ঠিকমত উপভোগ করতে পারেনা অথচ ঈদের মূল আকর্ষন তারাই... শিশু, বালক-বালিকা এবং কিশোর-কিশোরি... তাদের জন্য মাঝে মাঝে মায়াও হয়... নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় ... আমার শৈশব-কৈশরের ঈদ অনেক বেশি আন্দময় ছিল ঢাকায় বসবাসরত কনিষ্ঠ নাগরিক-গনের থেকে...... সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ......

                                  ---------------------------X-----------------------------

লেখাটি ০৮ই নভেম্বর, ২০১১ সালে প্রথম সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।সামহোয়্যার ইন ব্লগে লেখাটির লেখাটির লিঙ্ক।

আজ একই সাথে ওয়ার্ড প্রেস ব্লগে প্রকাশিত