Thursday, June 21, 2012

ক্ষনিকের স্মৃতিচারণ.....


সারাদিন ভালই কাটল । কোরবানির দিন সাধারণত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয়না। সবাই যার যার পারিবারিক ব্যস্ততায় মারাত্মক ব্যস্ত হয়ে যায় তার উপর অনেক বন্ধুর তাদের কর্ম জীবনে প্রবেশের পর প্রথম ঈদ। বেশির ভাগই শুনলাম কোরবানির পশু কেনার সময় নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক ভাবে অংশগ্রহন করেছে; ব্যপক দ্বায়িত্ব  :|  আর যারা (অনধিক চার জন) বিয়ে করেছে তাদের অভিজ্ঞতা আসলেই.. আসলেই....

রাত প্রায় ১০ টায় আম্মা বললেন ঔষধ কিনতে, ছোট ভাই এবং তাঁর জন্য। ভাবলাম হেঁটেই যাই, হেমন্তের স্নিগ্ধ বাতাস উপভোগ হবে এবং সবচাইতে বড় কথা বেশ কিছুদূর হাঁটাও হবে কেননা ঠাণ্ডা লাগার পর কিছুদিন নিয়মিত দৌড় দেওয়া হচ্ছেনা, শরীর যেন কেমন জঙ্গধরা হয়ে গিয়েছে...
সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল, এলাকা থেকে বের হতেই এমন কতগুলো ঘটনার সম্মুখীন হলাম যা আমার উচ্চমাধ্যমিক-সম্মান এই প্রায় ৬-৭ বছরের স্মৃতি নাড়িয়ে দিল এবং বুঝিয়ে দিল আমি আসলেই বড় হয়ে গেছি এবং ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচন করার নুন্যতম বয়স পার করে এসেছি।

দুই গ্রুপ  (সর্বমোট ১৭-১৮ জন) ছেলে চিল্লা পাল্লা করছে আর থেমে থেমে মারপিট করছে তবে অংশগ্রহন করছে চারপাঁচ জন, কয়েকজন মোবাইলে তাদের বড়ভাই (এলাকার), কাজিন কিংবা অন্যান্য বন্ধুদের সাথে কথা বলছে; ষ্ট্র্যাটিজিক রি-ইনফোরসমেন্টের জন্য সম্ভবত এবং বাকিরা আক্ষরিক অর্থেই মজা দেখছে। এটা পুলিশ কেস হয়ে গেলে কিংবা এলাকার ময়-মুরব্বীগণের বিচার (সম্ভাবনা কম এমন এখন দেখা যায়না )বসলে এরা রাজসাক্ষী হবে। হঠাৎ মনে পরে গেল নিজের সেই দিন গুলোর কথা যখন (২০০১-০৪) ১০, ১১ এবং ১২ ক্লাশে পরতাম। আহা কতই না গুরুত্বপূর্ন ছিল এমন সব ঘটনা!!! সেইসব দিনগুলি এখন মনে হলেই হাসি পায় --- কে কখন বাটপারি করেছে , ম্যাচে অযথা আউট দিয়েছে ;), রান চুরি করেছে ;) কিংবা আরেকজনের গার্লফ্রেন্ডের কিংবা পছন্দের মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলেছে :P:P:P, গুটিবাজি করেছে :P অথাবা স্যার প্রদত্ত নোটের কথা কাওকে জানায়নি (এর মদত সাধারণত ক্লাসের প্রথম দিকের রোলধারি সহপাঠীরা দিত)... কিছুক্ষন দাড়িয়ে বুঝলাম এদের কারনটিও নেহাত কম-গুরুত্বপূর্ন নয় কেননা এদের একটি গ্রুপের ছেলেকে রিকশা ভ্রমণরত সময় আরেকটি গ্রুপের ছেলেরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে কিছু একটা করেছে... ঐ কিছুট জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হলোনা...

কিছুদূর দূরে মোড় নেওয়ার পর দেখলাম একটি গ্রুপ আড্ডা দিচ্ছে... চেহারা বলে দিচ্ছে চোখে মুখে বিশ্ব বিপ্লবেরর স্বপ্ন... কয়েকটা কে চিনি মুখ দেখা এরা বিশ্ববিদ্যাল ১ম ব ২য় বর্ষের ছাত্র.. সালাম দিল বাহ বাহ ....

মাঝে মাঝেই গাড়ি যাচ্ছে লক্ষ্য করলেই দেখা যায় এক ছেলে এবং এক মেয়ে বসা তারা বিএফ+জিএফ=কাপল... আহা..আর পথ পারি দেবার সময় পথের ধারে তুলনামূলক অন্ধকার স্থানে কিংবা গাছের আড়ালে গাড়ি থামানো দেখতে পেলাম সামান্য ব্যাতিক্রম বাদ দিলে.. বেশিভাগ ক্ষেত্রেই একটি ছড়ার স্বার্থকতা পাওয়া যায়...

গাড়ি চলে তেলে, জলে নয়....
ভালোবাসা বাড়িতে, গাড়িতে নয়.....


তবে প্রাইভেট আরোহিরা যুক্তি দেখাতে পারেন এটা “প্রাইভেট গাড়ি” তবে প্রতিযুক্তিতে তা বোধয় টিকবেনা... রাস্তাত পাবলিক..

ঔষধ কিনে ফিরে আসার সময় রাস্তায় এলাকার নাইট গার্ড মামুদের সাথে দেখা... তাদের বাক্য দ্বারা তৈল মর্দিত অতঃপর বখশিশ হিসেবে শ কয়েক প্রাপ্তি বিয়োগ...  :B#  :B#  :B#  :B#  বুঝলাম বড় হয়ে গেছি আসলেই...

ঈদ উদযাপনের একটি বিশেষ আনন্দ এখন আর কাওকে করতে দেখা যায়না তা “আতশবাজি” ফাটানো।  সেই ২য় শ্রেণী হতে একেবারে ৮ম-৯ম শ্রেনী পর্যন্ত, কৈশরে ঈদের আগের দিন এবং ঈদের দিনের মূল আকর্ষনই ছিল পটকা ফাটানো। আতশবাজি ফাটানো এখন যেটা জাতীয়-আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে অসম্ভব... হাজার হোক অনেক জঙ্গিই, কয়েক বছর আগে দেশের ৬১ টি জেলায় তাদের প্যারালাল বোমা হামলাকে পটকা ফোটানোর সাথে তুলনা করছে... তাদের তো আর সুযোগ দেওয়া যায়না...

তবে ঢাকায় একটি জেনারেশন সম্ভবত ঈদ ঠিকমত উপভোগ করতে পারেনা অথচ ঈদের মূল আকর্ষন তারাই... শিশু, বালক-বালিকা এবং কিশোর-কিশোরি... তাদের জন্য মাঝে মাঝে মায়াও হয়... নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় ... আমার শৈশব-কৈশরের ঈদ অনেক বেশি আন্দময় ছিল ঢাকায় বসবাসরত কনিষ্ঠ নাগরিক-গনের থেকে...... সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ......

                                  ---------------------------X-----------------------------

লেখাটি ০৮ই নভেম্বর, ২০১১ সালে প্রথম সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।সামহোয়্যার ইন ব্লগে লেখাটির লেখাটির লিঙ্ক।

আজ একই সাথে ওয়ার্ড প্রেস ব্লগে প্রকাশিত

No comments:

Post a Comment