Sunday, October 28, 2012

সুব্রত রায় সাহারা এবং সাহারা ইন্ডিয়া পরিবারের দুর্নীতির আদ্যোপান্ত...






২০০৮-২০১১ সালের মধ্য সাহারা রিয়েল এস্টেট ১৯ হাজার কোটি টাকা বেশি অর্থ সংগ্রহ করে বিভিন্ন বন্ড এবং ডিভেঞ্চারের স্কিমের মাধ্যমে সম্পূর্ন বেআইনী ভাবে। এর পর ২০১১ সাল শেষ হবার আগেই বিভিন্ন খরচের পর সংগ্রহ আরও ১৭ হাজার কোটি রুপির উপর ছাড়িয়ে যায় যা প্রায় ২ কোটি ২১ লক্ষ মানুষ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

সাহারা গ্রুপ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান নয়। তারা বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে অসচ্ছ ইকুইটি বিক্রি করে সরাসরি খোলা বাজার থেকে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এই ১৭ হাজার কোটি টাকা শুধু তাদের রিয়েল এস্টেট ডিভিশনের মাধ্যমে তোলা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা ২০০৮-২০১১ সালের মধ্যো প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী সাহারা গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর মোট ৭৩ হাজার কোটি রুপি সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে সরাসরি বিভিন্ন বিনিয়োগকারী হতে। আমাদের দেশের ফটকাবাজ এমএলএম কোম্পানি ডেস্টিনি, সাহারার কাছে আসলেই নস্যি।

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশঃ
২০০৮ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া “সাহারা ইন্ডিয়ার ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনের” বিরুদ্ধে অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে। একই বছর “সাহারা ইন্ডিয়া ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনকে” নির্দেশ দেয় যেন তারা আর যেন নতুন কোন ডিপোজিট গ্রহণ না করে। সাহারা এর বিরুদ্ধে লখনৌ হাইকোর্টে গেলে হাইকোর্ট মামলা খারিজ করে দেয়, কেননা এখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ জড়িত।

ইনস্যুরেন্স রেগুরলেটারি এন্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটির জরিমানাঃ
ভারতের ইনস্যুরেন্স সেক্টর রেগুরলেটারি বোর্ড সাহারা লাইফ ইনস্যুরেন্সের বিরুদ্ধে জরিমানা করে বিভিন্ন বেআইনি কর্মকাণ্ড করার জন্য।

সিকুরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইণ্ডিয়ার আদেশ এবং সাবধানবানীঃ
সাহারা রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন লিমিটেডের অধীন “সাহারা প্রাইম সিটির” স্কিমে অবৈধ ভাবে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা। যার ফেসভেলু নির্ধারিত হয় ৫০০০ থেকে ২৪০০০ রুপি পর্যন্ত। এই ধরনের ডিবেঞ্চার (মূলত OFCD) বিনিময়ের জন্য উপযুক্ত তথ্য সাহারা গ্রুপ প্রকাশ করেনি।

ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আইন এবং বিভিন্ন নিয়মকানুন ভেঙ্গে অবৈধ ভাবে অর্থ সংগ্রহের পাঁয়তারা করার জন্য ২০১১ সালে “ভারতীয় সিকূরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন” সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার এবং সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে মামালা প্রদান করে। ২৪ নভেম্বার ২০১১ সালে সাহারা গ্রুপ এর অর্থ সংগ্রহের উপর তাঁরা নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যুঃ
দিল্লী কোর্ট ২০১১ সালে এই সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে, ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় ফটকাবাজির জন্য। ফেব্রুয়ারি ৯ তারিখে দিল্লীর প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায়কে গ্রেপ্তার করার জন্য সমন জারি করে। নিরাজ পান্ডে নামক এক ব্যক্তি দায়ের করা মামলার উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে এটা করা হয়।

নিরাজ পান্ডের ভাষ্য অনুযায়ী সাহারা ২০০৩ সালে “সাহারা স্বর্ণ যোজনা” নামক একটা টাউনশিপ স্কিম চালু করে, যার মূল্য ছিল নিম্নে এক লক্ষ রুপি। যা ৬ বছরেও শুরু করা হয়নি এবং ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশের বিনিয়োগে আগ্রহ:



সুব্রত রায় সাহারার ভাষ্য অনুযায়ী গত বছর আওয়ামীলীগ নেতা শেখ সেলিম তার সাথে দেখা করে তাকে বিনিয়োগ করার জন্য বলেন। এই বছর বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং এদেশে তাদের প্রকল্পের / সাবসিডিয়ারির নাম রাখা হয়েছে “সাহারা মাতৃ ভূমি উন্নয়ন সংস্থা” এবং এর প্রধান করা হয়েছে শেখ সেলিমের গুণধর পুত্র শেখ ফাহিমকে। এবং শেখ সেলিম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই।

কি আর বলব পারিবারিক লাভের জন্য দেশের স্বার্থ বিক্রি যা আপাত দেশ বিক্রির সামিল।

সাহারার-বসুন্ধরার সাথে সৌজন্যতাঃ



কোন নতুন জায়গায় আসলে পুরানো মোড়লদের সাথে ঝগড়া করে কি লাভ যদি সমঝোতা করা যায়। দেশের শীর্ষ রিয়েল এস্টেট কোম্পানি (ওরফে প্রধান ভূমি দস্যু) বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলমের সাথে সাহারা গ্রুপের চেয়ারম্যান সুব্রত রায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ। বাংলাদেশের ভূমি নিয়ে তাদের দুজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি। তবে মনে হচ্ছে কয়েক বছরের মধ্যই পুরোদমে লুটপাটের মচ্ছব চলবে।

বিশেষ চরিত্র সুব্রত রায় সাহারাঃ
সুব্রত রয় সাহারার সবচাইতে বড় অস্ত্র বোধয় তার মুখ। বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে সে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে সরাসরি জনগন থেকে যার বেশিরভাগই ভুয়া। ৫০ শতাংশ তালিকা বিনিয়োগকারীর বাস্তব অস্তিত্ব নেই তথা এসব বেশীরভাগই অবৈধ কালো টাকা। তিনি দাবী করেন তার কোম্পানিতে সবাই কাজ করে কেউ মালিক নয় কিন্তু এই হীন মুখোশের অন্তরালে নিজে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছে। সারা পৃথিবীতে সম্পদ গড়েছেন। তার নিজের নামে ভারতে একটা ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানিয়েছেন এবং তিনি নিজে ভয়াবহ বিলাসিতার মধ্য জীবন যাপন করেন। সবচাইতে খারাপ হল তিনি একটা খোলস নিয়ে চলেন। তিনি নিজের পরিচয় দেন "সাহারাশ্রী সুব্রত রায় সাহারা হিসেবে।

তিনি বিনিয়োগকারীঃ
তিনি মনে করেন পরিবেশ বাদীরা নাকি নানা রকম ঝামেলা করে। তিনি একটি দেশে হাজার হাজার কোটি বিনিয়োগ করতে আসলেও তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নাকি চিনেনা। বেশ কিছু গ্লোবাল বিজনেসম্যান কে দেখেছি, এই টাইপের কথা তারা ভুলেও বলবেনা। চিনবেন কিভাবে, তাকে এদেশে এনেছে আরেক ফটকা শেখ সেলিম যার কাজই কমিশন খাওয়া।

আমার আগের প্রাথমিক পোষ্টঃ

দেশীয় ভূমি দূষ্যদের জ্বালায় মানুষ তটস্থ আওয়ামীলীগের নেতাদের নিজ স্বার্থে বিদেশী ভূমি দস্যু আমদানি


বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদ পত্রের রিপোর্টঃ

ইন্ডিয়া টুডে

এক্সপ্রেস ইন্ডিয়া

ডি এন এ ইন্ডিয়া

লাইভ মিন্ট

ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি রেগুলেটারি এজেন্সির তদন্ত রিপোর্টঃ

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া

ইনস্যুরেন্স রেগুরলেটারি এন্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি

সিকিউড়িটি এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড - ১

সিকিউড়িটি এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড - ২

সিকিউড়িটি এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড - ৩

সিকিউরিটি আপিল ট্রাইব্যুনাল

সাহারার ওয়েবসাইটঃ

উইকিপিডিয়া আর্টিকেলঃ সাহারা গ্রুপ

সাহারা গ্রুপের নিজেস্ব সাইট

[বিঃদ্রঃ - লেখাটি সকালে লেখা হয়েছে। ঠিক মত সম্পাদনের সময় পাওয়া যায়নি। কিছু বানান কিংবা ব্যাকরণগত ভুল থাকতে পারে। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কাম্য।]


----------------------------------------XXXXX------------------------------------------------

 প্রবন্ধটি ২১ শে মার্চ, ২০১২ সালে সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment