Sunday, October 28, 2012
বিবাহ চুক্তি- চুক্তির অর্থনৈতিক দিক dowry, maintenance, alimony..
আমার এক ব্যবসায়িক অ্যাসোসিয়েট, আমার থেকে বয়সে বেশ কয়েক বছরের বড়, প্রায় ৩৪ বছর। একেবারে সেলফ মেইড, হাইলি প্রফেশনাল বিজনেস ম্যান (তবে পারিবারিক ভাবেও ওয়েল কানেক্টেড যা তিনি ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন) আমার সাথে ছাড়াও ওনার অন্যান্য দিকেও অনেক ব্যবসা আছে। নতুন বিয়ে করেছেন কয়েকমাস আগে, ওই পাত্রী আমেরিকার সিটিজেন যদিও পাত্রও সিটিজেন। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন আমেরিকা এবং বাংলাদেশ দুই যায়গায়ই হয়েছে। উনার স্ত্রী উচ্চশিক্ষিত, ভালো চাকুরী করেন ব্যাংকে।
কিছুদিন আগে উনি কতগুলো কথা বলেছেন লাঞ্চ আড্ডার সময়, যা সত্যিই চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে। তাই শেয়ার করলাম-
ভাবীর সাথে যদিও উনার প্রায় ৫ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল (আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রায় ২ বছর এক সঙ্গেও ছিলেন মানে লিভ টুগেদার )। গত বছর উনি বিয়ে করেছিলেন এবং বিয়ের আগে নাকি “বিয়ে-পূর্ব সমঝোতা” (prenuptial agreement) করেছেন। যদি ডিভোর্স হয় তাহলে সম্পত্তির কেমন ভাগ হবে তা নাকি ওই চুক্তিতে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী (উনাদের দ্বিতীয় রেজিস্ট্রেশন ওখানে হয়েছে) ডিভোর্সের পর সম্পত্তি যার যাই থাকুক ৫০/৫০ হারে দুপক্ষই পায়। তাই আগে ভাগেই তারা ঠিক করে রেখেছেন worst case scenario তে সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা কেমন হবে। তার কথা হল, তিনি যা ইনকাম করবেন তা থেকে তিনি সাবেক স্ত্রীকে (যদি বিচ্ছেদ হয়) পরবর্তী ভরন পোষণ দিতে রাজী; কিন্তু কোনমতেই তিনি উত্তারিধাকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি সাবেক স্পাউসকে দিতে রাজী নন। আমার ধারণা অনুযায়ী, উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি যত সম্পত্তি এবং ব্যাংক ব্যালেন্স পাবেন টাকার অঙ্কে নিশ্চিত ৯ ডিজিটের সংখ্যা পার হবে, যথেষ্ট ধনী পরিবারের সন্তান উনি।
আসলে ওই আইন শুধু ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিচ্ছেদের সময় যদি স্ত্রীর সম্পত্তি বেশি থাকে, তাহলে সেই মহিলা তার সাবেক স্বামীকে তার সম্পত্তির সমান অংশ দিতে বাধ্য থাকবে। এমনকি সাবেক স্বামী যদি আরেকটা বিয়ে করে তারপরও দিতে হবে; যেমন বেশি অর্থশালী স্বামী তার সাবেক স্ত্রীকে দিতে বাধ্য। সমসাময়িককালে পশ্চিমে নাকি এটা এখন অহর অহর হচ্ছে, স্ত্রী তার সাবেক স্বামীকে ভরন পোষণ দিতে বাধ্য হচ্ছেন আইনের কারণে; কর্মজীবনে স্বামী থেকে সফল অনেক মহিলার এটা পছন্দ নয়। নারীরা যে অনেক ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই “কর্মজীবনে সফলতার” দিক দিয়ে পুরুষ এমনকি নিজ স্বামীকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে এটা একটা প্রমাণ। তবে অনেক পুরুষের মতই অনেক নারীই এতে বেজায় নাখোশ, কার ভালো লাগে সাবেক স্বামীকে নিজের কষ্টার্জিত টাকা দিতে। যদিও এটা সমঅধিকারের একটা ভিত্তি। আবার অনেক পুরুষও এটা সেচ্ছায় নেয়না, আত্মমর্জাদার জন্য যেমন আনেক নারী তার সাবেক স্বামী হতে কোন সম্পত্তি নেননা, যদিও এর সংখ্যা অনেক কম।
আমাদের দেশে সিভিল আইন কেমন আমার জানা নাই। তবে যতটুক জানি, ইসলামিক আইন অনুযায়ী, স্ত্রীর কোন সম্পত্তিতেই স্বামীর কোনই হক নেই। বিয়ের সময় দেনমোহর তো আছেই, বিয়ের পর স্বামী সংসারের খরচ চালাতে বাধ্য এমনকি বিয়ে বিচ্ছেদ হলে স্বামী তার স্ত্রীকে খোরপোশ দিতে বাধ্য, সাবেক স্ত্রী যত ধনী হোক না কেন। কমন সিভিল বিয়েতে এক্ষেত্রে দুজনেরই দায়িত্ব সমান সমান।
এখন মনে হচ্ছে বিয়ে একটা অর্থনৈতিক ভেঞ্চার, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। যে যতই বুদ্ধিবৃত্তিক বড় বড় কথা বলুক না কেন, বিয়ে শুধুই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। এটা শুধুই ভবিষ্যৎ বংশধর বৃদ্ধি করে নিজ জিন প্রসার করার জন্য সেই সঙ্গে বিপদে আপদে কারও loyal সান্নিধ্য প্রাপ্তি, সহায়তা লাভ এবং সামাজিক স্বীকৃত জৈবিক সংগ পাবার জন্য জন্য দুই বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্য একটা সামাজিক চুক্তি, যার সাক্ষী হল সমাজের অন্যান্য মানব সদস্য। যদিও পশ্চিমে অনেক দেশে বিয়ের জন্য বিপরীত লিঙ্গ বাধ্যতামূলক নয় । অন্যান্য যেকোনো চুক্তির মতই এই চুক্তি যেকোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে, কেননা এটা অলঙ্ঘনীয় নয়। ভাঙ্গার পর কি হবে তা মূলত চুক্তির শর্ত এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী ঠিক হয়।
সুতরাং, অন্যান্য চুক্তির করার মতই এই চুক্তি করার সময়ই চুক্তি ভাংলে কি হবে বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন। এক্ষত্রে অপর পক্ষের কতগুলো বিষয় মাথায় রাখা উচিত যেমন- স্বভাব-চরিত্র, আচার ব্যবহার, নমনীয়তা, সহনশীলতা, আত্মমর্যাদা বোধ, শারীরিক অবস্থা –সুস্থতা, শিক্ষা, ব্যক্তিগত অতীত ইতিহাস, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, সামাজিক মর্যাদা, পারিবারিক অবস্থা, এবং সর্বশেষে শারীরিক সৌন্দর্য। শারীরিক সৌন্দর্য অবশ্যই সবার শেষে, কেননা যে যত যাই বলুক, ৩০ এর পর মেয়েদের আসলে ন্যাচারাল সৌন্দর্য কমতে থাকে, কমবেই, বিশ্ব সুন্দর ঐস্বরিয়া রয়েরই নাই ( যতটুকু জানি প্রায় ৪ বারের উপর তাইনে কসমেটিকস সার্জারি করিয়েছেন, এখন যা দেখা যায় তা কৃত্রিম সৌন্দর্য ) তেমন ছেলেদের বেলতেও একই কথা, হ্যান্ডসামনেস কে কিংবা টাকা-পয়সাকে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া বোকামি । সবার প্রথমে নিশ্চিত ভাবে আচার-আচরণ-স্বভাব-চরিত্র।
সমাজে অনেক নারীপুরুষই টাকার লোভে, ব্যবসায়ীক সুবিধা কিংবা চাকুরীর বিনিময়ে বিয়ে করে। তাদের কথা আলাদা। তারা তাদের নূন্যতম আত্মমর্যাদা সেচ্ছায় বাদ দিয়েছে। তবে আমি দেখেছি বেশিরভাগ নারী পুরুষই বিয়ের সময় অপর পক্ষের সম্পত্তির কথা চিন্তা করেনা। সবাই প্রথমে দেখে ওই স্বভাব-চরিত্র।
হিসেব করে দেখলাম, আমি যদি এখনই সামাজিক ভাবে বিয়ে করি, সব মিলিয়ে নূন্যতম প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হবে; ইসলামিক নিয়মে দেনমোহর নূন্যতম যদি ১০ লক্ষ টাকাও ধরি। সুতরাং, এই পরিমাণ অর্থ এই সময় বিয়ে চুক্তিতে ব্যয় করার চেয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা লাভ জনক। সবচাইতে বড় কথা, এখন বিয়ে করতে হলে আমাকে পরিবার হতে টাকা নিতে হবে। উল্লেখ্য, আমার ওই ব্যবসায়ীক পার্টনারের প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, যদিও উনার দুই যায়গায় আনুষ্ঠানিকতা করতে হয়েছে। আমি চাই নিজের বিয়ের খরচ নিজে বহন করতে। ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ অবশ্যই পারব।
আসলে সরকারী / মাল্টিন্যাসনাল চাকুরী ব্যাতীত ৩০ এর আগে নিজ খরচে বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী বসবাস করাটা একটু কষ্টের হয়ে যায়; আর যারা নতুন ব্যবসা বানিজ্য করেছেন তাদের জন্য ব্যাপারটা আসলেই রিস্কি; নিজের জন্য এবং যাকে জীবন সঙ্গী করা হবে তার জন্য আরও বেশি। কেননা ব্যবসাতে নিজের ভাগ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত খেলতে হয়, নিশ্চিত বলে কিছু নেই; সব chaotic। তবে এর ফল চাকুরী হতে অনেক মধুর। এখানে আলোচনায় আমি ঘুষখোর চাকুরীজীবী এবং অবৈধ ব্যবসার ব্যবসায়ীদের কথা বলিনি, তাদের কথা আলাদা।
আসলে কোন কাজের নিয়তি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন। ভালো নিয়ত নিয়ে কোন কাজ করলে তার ফলাফল আল্লাহর রহমতে সবসময়ই ভালো হয়।
----------------------------------------XXXXX------------------------------------------------
প্রবন্ধটি ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ সালে সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment