Sunday, October 28, 2012

নতুন কোম্পানি আইন... বাকশালি আইনের ডিজিটাল সংস্করণ

ভালো বেতনের চাকুরী ছেড়ে নিজে কিছু করার চেষ্টা করছি। আমি রিস্ক নিয়েছি। বড় রিস্ক। আমার থেকে অনেক মেধাবী চাকুরী ছাড়ছেননা; আমি জানি তারা আমার থেকে আরও ভালো করত ব্যবসা করলে। কিন্তু তারা রিস্ক কিংবা কষ্ট করতে ভয় পাচ্ছে। তাদের সাথে আমার পার্থ্যক্যঃ আমি রিস্ক নিচ্ছি এবং আমি কষ্ট করছি। নিঃসন্দেহে শান্তিকালীন সময়ে চাকুরী হতে ব্যবসা করা অনেক কঠিন। আপনার চতুর্মুখী চিন্তা করতে হবে। আক্ষরিক অর্থেই ছুটি নাই, ঘুমানো ছাড়া।

ব্যাংক, ইন্ডিভিডুয়াল ইনভেস্টর, ক্লায়েন্ট, কাস্টমার, সাপ্লাইয়ার সর্বোপরি নিজ প্রতিষ্ঠানের স্টাফ (কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক), পার্টনার, এবং নিজে সেই সঙ্গে মার্কেট এবং কম্পেটিটর। সবার চিন্তা একসাথে। এই সাথে মানব, পরিবেশ এবং যন্ত্র । আসলে এত ঝামেলায় অনেকই যেতে চাননা। যারা উঁচু বেতনে কাজ করেন অথবা ঘুষ-উপরি কামান তারা চাকুরীর সাথে সাথে সাইলেন্ট ইনভেস্ট করেন অথবা শেয়ারে টাকা খাটান। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান শুরু করে পরিচালনা করার সাহস কিংবা ইচ্ছা করেননা। একটা প্রতিষ্ঠান আন্টোপ্রেনিয়ার জন্য সন্তানের মতই। পরিকল্পনা –অর্থ সংস্থান– বাস্তবায়ন - বিপণন, চারটা শব্দ কিন্তু বিশাল কর্মযজ্ঞ সমস্ত কিছু ঢেলে তা করতে হয়।

এখন কারও প্রতিষ্ঠান এত ঝুঁকি নিয়ে দাড় করানোর পর যদি বাহিরের কেউ এসে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাহলে কেমন লাগবে। বাংলাদেশ ব্যবসা করার জন্য পৃথিবীর অন্যতম কষ্টকর যায়গা আমলাতন্ত্রের অযৌক্তিক কালক্ষেপণ এবং পদে পদে ঘুষের ব্যাপকতা আছেই। তার উপর যদি এমন সম্বাভনা হয় যে যে কারও খবরদারি করার সুযোগ আসে তাহলে কেইবা ব্যবসা করার জন্য এগিয়ে আসবে।

রাষ্ট্রের নিজস্ব আইনের মধ্য মানুষের স্বাধীন ব্যবসা করার সুযোগ থাকতে হবে। যা “লেইজে ফেয়ার” নামে পরিচিত। রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিবে, বিনিময়ে ব্যবসা থেকে তারা কর পাবে। ব্যবসাতে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার আইন থাকতে হবে। কিন্তু ব্যবসা দখল করার ক্ষমতা যদি সরকারের হাতে থাকে (সরকার ট্যাক্সের টাকা বিনিয়োগ/বেইল আউট না করেও) দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। এটা হল বাকশালি ব্যবস্থা। এমন হলে দেশে কেউ বিনিয়োগ করবেনা। কে ব্যবসা হারাতে চায়।

কোন পাবলিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত) অথবা যেসব প্রাইভেট সাধারণ মানুষ হতে বন্ড/সিকিউরিটি/ স্টক বেঁচে পুঁজি সংগ্রহ করে সেখানে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ দরকার কারণ বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্থ বিনিয়োগ হয় যার নিয়ন্ত্রণ ঐ প্রতিষ্ঠানের কতিপয় পরিচালনা ব্যক্তির হাতে থাকে যাদের উক্ত বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর নিজেদের দায়ও কম থাকে। তাই অবশ্যই এই দুই প্রকার প্রতিষ্ঠান যেন স্বচ্ছ ভাবে চলে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের আইনি কাঠামো ভিন্ন হতে হবে এবং প্রয়োজনে সরকারি পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকা বিনিয়োগ কিংবা তা দিয়ে বেইল আউট না কর পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার আইন থাকা উচিৎ নয়।

কিন্তু একটি সোল প্রপ্রাইয়েটরশিপ কিংবা যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে যেখানে হাজার হাজার মানুষের বিনিয়োগ থাকেনা তাতে যদি প্রশাসক বসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে তাহলে কে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে যাবে; বিশেষ ভাবে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা অন্য দেশে বিনিয়োগ করবে যেখানে আইন আরও ব্যবসা বান্ধব। এসব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হলে প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে প্রচলিত আইন আছে তা দিয়ে খুব সহজে ডেস্টিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত এবং অনেক আগেই নিতে পারত। এত কাল ক্ষেপণের দরকার নেই। তাছাড়া পুজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জোচ্চুরি সহজে ধরা যেত। পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া যায় কেননা তা পাবলিক প্রতিষ্ঠান; তাও ততক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া উচিৎ নয় যতক্ষণ সরকার নিজে ঐ প্রতিষ্ঠানে জনগণের ট্যাক্সের টাকা বিনিয়োগ করে কিংবা বেইল আউট করে।

এখানে স্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে সরকার সবধরনের কোম্পানির জন্য এই আইন করতে যাচ্ছে যা দ্বারা দুটি দিক উম্মোচন হয়ঃ

১। সরকারের আইন প্রণেতাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং ব্যবসা এর আইনগত এবং প্রকার গত (বিজনেস এন্টিটি এবং বিজনেস মডেল ) কোন ধারনাই নেই। সোজা কথায় তাদের ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাব “বকলম”।

২. সরকার সুযোগ বুঝে এক বাকশালীয় কালো আইন করতে যাচ্ছে যেন আইনের দোহায় দিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেকোনো কারণে কিংবা ভুয়া কারণে রাজনৈতিক কিংবা সরকারের "নাট-বল্টুদের" ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এই আইন ব্যবহার করতে পারে।

একথা ভাবতে ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ইকোনমিক এনালিস্ট হওয়া লাগেনা প্রাইভেট কোম্পানি ডেস্টিনি কিংবা হলমার্ক কিংবা স্টক কোম্পানি সামিট কিংবা বেক্সিমকোর হাজার হাজার কোটি টাকার ফটকামি-জালিয়াতিতে রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদ কোন লাভের ভাগ পায়নি।

যেকোনো কোম্পানি আইন করার সময় সরকারকে অবশ্যই নিম্নোক্ত তালিকা মাথায় রাখতে হবে। পাইকারি ভাবে সব গুলোকে একসাথে ফেললে তা দেশের অর্থনীতিতে কোন মঙ্গল বয়ে আনবেনা, আইনে তো নয়ই।

সত্তা ভিত্তিক
#জয়েন্ট স্টক কোম্পানি / পাবলিক কোম্পানি
#পার্টনারশিপ (জেনারেল পার্টনারশিপ, লিমিটেড পার্টনারশিপ, লিমিটেড লাইয়েবিলিটি ইত্যাদি)
#সোল প্রপ্রাইয়েটরশিপ
#ফ্রঞ্চাইজি
#মিউচুয়াল

বিশেষায়িত কাজ
#প্রফেসনাল কন্সালটেন্সি ফার্ম এবং হাসপাতাল
#ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান
#বিপজ্জনক পদার্থ / যন্ত্র প্রস্তুতকারক

অলাভজনক / সামাজিক প্রতিষ্ঠান
#নন প্রফিট কো-অপেরাটিভ
#সোস্যাল বিজনেস
#নন প্রফিট

এছাড়া,
প্রয়োজন অনুসারে আরও ভাগ করে আইন করা উচিৎ।
তাছাড়া,
"এম-এল-এম কোম্পানি" আইন করে বন্ধ করার সময় বোধয় এখন এসেছে

নতুন কোম্পানি আইন সংবাদ - ১

নতুন কোম্পানি আইন সংবাদ - ২


----------------------------------------XXXXX------------------------------------------------

 প্রবন্ধটি ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ সালে সমহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment